সড়কে মৃত্যুর মিছিল
ফরিদপুরে বাস উল্টে সাতজনসহ সারাদেশে ১৬ মৃত্যু
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
০৮-০৪-২০২৫ ০৭:৪৩:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৮-০৪-২০২৫ ০৭:৪৩:৩৫ অপরাহ্ন
ফরিদপুরে বাস উল্টে খাদে পড়ে ৭জন নিহত হয়েছেন। ছবি : ফোকাস বাংলা নিউজ
থামছে না সড়কে মৃত্যু। প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পঙ্গুত্ববরণ করছে হাজার হাজার মানুষ। অসহায় হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ১৬জনের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মর্মান্তি ঘটনা হলো ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস উল্টে বাবা-ছেলেসহ ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাস্কুপের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান- ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস উল্টে বাবা-ছেলেসহ সাত জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় কমপক্ষে ৩৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই জন নারী ও তিন জন পুরুষ রয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের জেলা সদরের বাখুন্ডা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ননগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জোয়ার সর্দার (৬৫), তার ছেলে ইমান (২৮), ফজিরুন নেছা (৬০), শ্রাবন হাসান (৪০), আজিবুর (৪৩), ভারতি সরকার (৪০) ও দীপা খান (৩৪)। জানা গেছে, মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসছিল ফারাবি পরিবহন নামে একটি লোকাল বাস। বাসটি বাখুন্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে থাকা একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে খাদে উল্টে যায়। এতে সাত জন মারা যান। এ ছাড়া আহতদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সাত জনকে মৃত অবস্থায় ও ৩১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান- চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. তানভীর (২৪) ও রফিকুল ইসলাম (২৫) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শী মো. সাইফুল ও নিহতদের স্বজনেরা জানান, বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছিলেন গাছতলা মধ্যপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. তানভীর এবং আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রামের ইদম মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম। পথে সুলতানপুরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান সিএনজিকে চাপা দিলে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তানভীর ও রফিকুল। এ ঘটনায় আহত অপর দুই যাত্রীর নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আকস্মিক দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে গিয়ে নিহতদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা এই ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপপরিদর্শক মো. মাহাবুব আলম বলেন, ‘ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং চালক পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।’
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান- রাজশাহীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মোহনপুর উপজেলায় দুজন এবং নগরীতে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের মোহনপুর উপজেলার মৌমাছি বাজার সংলগ্ন কারিগরি ইনস্টিটিউটের সামনে ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে লিটন (২৭) নামে এক ভ্যানযাত্রী নিহত হন।এদিকে, মোহনপুরের সইপাড়া ট্রাফিক অফিসের সামনে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা খড়বোঝাই ভটভটিতে ধাক্কা দেয় রাজশাহী শহর থেকে আসা মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটগামী একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা। এতে অটোরিকশাযাত্রী বাগমারা উপজেলার সাঁইধাড়া গ্রামের মৃত এনায়েতের ছেলে আব্দুল সামাদ (৭০), তানোর উপজেলার দমদমা গ্রামের রায়হানের স্ত্রী শাপলা খাতুন (৪২), মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার হরিদাগাছি গ্রামের শ্রী রঘুনাথের স্ত্রী মৌমিতা রানী কর্মকার (৬০), একই গ্রামের মৃত ইলিয়াস সোনারের ছেলে মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজ্জামান (৬৫), সামপুর হাটের আজাহারের স্ত্রী রানী বেগম (৪২) এবং আজাহারের মেয়ে অপর্ণা (১৩) গুরুতরভাবে আহত হন।স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আব্দুল সামাদকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে, রাজশাহী মহানগরীর উত্তর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কের পাশে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমা মুস্তারিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে তারা রাস্তায় একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। গত কয়েক দিন ধরে নিহত ব্যক্তিকে আমচত্বর এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ওসি জানান, মৃত্যুর সময় নিহত ব্যক্তির শরীরে ছিল একটি ফুলহাতা চেক টি-শার্ট এবং সাদা পাজামা। বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। মরদেহের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান- ভোলায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে মো. হুমায়ুন কবীর (৫০) নামে এক আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলার ভেদুরিয়া সড়কের খেয়াঘাট ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. হুমায়ুন কবীর জেলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চর সুভী গ্রামের কাজি বাড়ির ইউনুছের ছেলে। আহত দুজনও একই উপজেলার বাসিন্দা। নিহতের ভাই মো. জাকির কাজি জানান, সকালের দিকে হুমায়ুন কবীরসহ আরও দুজন ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা করেন। হুমায়ুন মাঝে বসে ছিলেন। তারা ভেদুরিয়া থেকে বরিশাল যাওয়ার কথা ছিল। পথে ভোলা সদরের খেয়াঘাট ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে সামনে একটি কুকুর চলে আসে। এ সময় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনই আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হুমায়ুন কবীরকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাহাদাৎ হাসনাইন পারভেজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শৈলকুপা প্রতিনিধি জানান- ঝিনাইদহের শৈলকুপার চানপুরে গাড়ির ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা গর্ভবতী মা ও ছেলে নিহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে উপজেলার চানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- শৈলকুপা উপজেলার সিতলিডাঙ্গা গ্রামের সোহেল শেখের স্ত্রী রিপা খাতুন (২৬) ও তার ছেলে শেখ সোয়াদ (৬)। নিহতের স্বজনরা জানান, রোববার ঝিনাইদহ শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখান রিপা। পরে ছেলেকে নিয়ে শৈলকুপার ভাটই বাজার এলাকায় বাবার বাড়িতে যান তিনি। আজ সোমবার অটোরিকশায় ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন রিপা। পথে তাদের অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় বাস বা ট্রাক। পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে রিপাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলে সোয়াদের মৃত্যু হয়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, রিপাকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শিশু সোয়াদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টায় মারা যায়। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আরাপপুর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে এম হাসানুজ্জামান জানান, অটোরিকশাচালক পালিয়ে গেছেন। অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি বাস নাকি ট্রাক তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
খুলনা ব্যুরো জানায়- খুলনায় রাস্তা পার হওয়ার সময়ে ইজিবাইকের ধাক্কায় মো. জাহিদ গাজী নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নগরের নিরালা তাবলিগ মসজিদের সামনে শেরেবাংলা রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহিদ গাজী নিরালা ১৯ নম্বর রোডের বাসিন্দা কালাচান গাজীর ছেলে। তার মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের (খুমেক) মর্গে রয়েছে।খুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আশরাফুর রহমান জাহিদ গাজীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাত সোয় ৯টার দিকে জাহিদ নিরালা তাবলিগ মসজিদের সামনের রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময়ে দ্রুতগামী একটি ইজিবাইক সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পরে ওই ইজিবাইক চালক এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ হাসপাতালে রেখে ইজিবাইক চালক সেখান থেকে পালিয়ে যান। মরদেহটি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স